অনলাইন ডেক্স: জাপানভিত্তিক বহুজাতিক কম্পানি জাপানস এনার্জি ফর এ নিউ এরা (জেরা) বাংলাদেশের মেঘনাঘাটে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এরই মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলভাবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। গ্যাসসংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জেরা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে একই সময় গড়ে ওঠা সামিট ও ইউনিকের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করেছে। অথচ সব রকমের প্রস্তুতি থাকার পরও অদৃশ্য কারণে জাপানের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। জানা গেছে, সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র গত ২৬ এপ্রিল এবং ইউনিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র গত ২০ জানুয়ারি উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু জেরা মেঘনাঘাটে গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি।
ফলে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় তারা বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যেতে পারছে না। কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে না পারলেও জেরাকে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ ঋণের কিস্তি। সম্প্রতি জেরার পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গ্যাস সরবরাহ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কেন্দ্রটি ২২ বছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিপিডিবির কাছে বিক্রি করবে ৭.৩১২৩ সেন্ট বা পাঁচ টাকা ৮৪ পয়সা দরে। এই কেন্দ্র বাণ্যিজিক উৎপাদনে যাওয়ার পর উৎপাদিত ৪০০ ভোল্টের বিদ্যুৎ পিজিসিবির মেঘনাঘাট সাব স্টেশন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির মহাব্যবস্থাপক (আঞ্চলিক বিপণন ডিভিশন-নারায়ণগঞ্জ) প্রকৌশলী সেলিম মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্যাস ক্রাইসিসের কারণেই মেঘনাঘাটে জেরার বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আপাতত গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ সাইদুল হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা গ্যাসের বাড়তি সংস্থান চেয়ে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে (বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়) চিঠি দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় যদি আমাদের গ্যাসের সংস্থান দেয় তাহলে জেরার বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমরা গ্যাস সরবরাহ করতে পারব।
গ্যাসের বাড়তি সংস্থান না পেলে আমাদের পক্ষে গ্যাস দেওয়া সম্ভব না।’
বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাপানের এই কম্পানি মেঘনাঘাট যৌথ জ্বালানি (কম্বাইন্ড সাইকেল) নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করে। বাণিজ্যিক অপারেশন অর্জনের জন্য গত ২৬ অক্টোবর পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কার্যক্রমও শেষ করে। কিন্তু তিতাস থেকে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে না কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে এই প্রকল্পে জেরা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার (এক বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ করেছে। প্রকল্পটির বিনিয়োগে জেরা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোপারেশনসহ একাধিক জাপানিজ ব্যাংক ঋণ নিয়েছে।
জেরা মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব কন্ট্রাক্টস অ্যান্ড কমার্শিয়াল স্মিতেশ বৈদ্য বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারবে যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, জেরার বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবশ্যই গ্যাস দেওয়া উচিত। আর তা না হলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেচিবাচক প্রভাব পড়বে।