অনলাইন ডেক্স: মানিকগঞ্জে টাকার বিনিময়ে ৭৯৫ জন রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন ও সনদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মো. আইয়ুব আলী। এ ঘটনায় তার সচিবসহ সংশ্লিষ্টরাও জড়িত বলে অভিযোগে জানা গেছে। ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ায় এর সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ঘটনাটি প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন ওই জনপ্রতিনিধি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)আহসানুল আলম। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে । ইতোমধ্যে এই অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের সরকারি নিবন্ধন আইডি বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকায় সাময়িক ভাবে ওই পরিষদের সরকারি নিবন্ধন অ্যাকাউন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে দুর্গম চরাঞ্চল চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদ। এই দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে এলাকার বাসিন্দা না হওয়ার পরেও গোপন আর্থিক চুক্তির বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত ৭৯৫ জন রোহিঙ্গাকে ওই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে প্রত্যয়ন দিয়ে তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী।
ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এসব সনদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
ইউনিয়ন পরিষদের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এই অবৈধ কাজে সহায়তাকারী পরিষদের উদ্যোক্তা মো. জলিল মন্ডল নিজের দোষ স্বীকার করে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের স্থানীয় সরকার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেরুয়ারি মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চরকাটারী ইউনিয়নে ৭৯৫ জনের অবৈধ জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়। ১০ মাসের মধ্যে হওয়া ওই জন্মনিবন্ধনগুলো বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং জন্ম নিবন্ধনগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এদিকে চরকাটারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কম্পিউটারের কাজ তেমন বুঝি না। পরিষদের উদ্যোক্তা মো. জলিল মন্ডলের কাছে আমার ইউপির জন্মনিবন্ধনের আইডির পাসওয়ার্ড থাকত। সেই সুযোগেই উদ্যোক্তা জলিল এ রকম অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমিও খুব বিপদে আছি । তবে দায় এড়াতে না পেরে পলাতক আছেন চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মো. জলিল মণ্ডল। তাকে ইউনিয়ন পরিষদে পাওয়া যায়নি । তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, উদ্যোক্তা জলিলকে কয়েক দিন ধরেই এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল, ওয়াজ উদ্দিন ও রহিম মিয়া বলেন, ৭৯৫ জনের জন্মনিবন্ধন হয়েছে, তারা কেউ আমাদের এলাকার বাসিন্দা না। চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তারা টাকার বিনিময়ে অবৈধ জন্মনিবন্ধন করেছেন।
ইউপি সদস্য মো. জয়েদ আলী মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ৭৯৫ জনের অবৈধ এ জন্মনিবন্ধন হওয়ায় আমাদের চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষতি হবে। এর দায় চেয়ারম্যান, সচিব ও উদ্যোক্তার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরকাটারী ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কোনো সচিব ছিল না। উপজেলার পার্শ্ববর্তী বাচামারা ইউনিয়নের সচিব আলমগীর হোসেন এই ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০ অক্টোবর নতুন সচিব মো. সেলিম দায়িত্ব গ্রহণের পরই অবৈধ জন্মনিবন্ধনের বিষয়টি তার নজরে আসে পরে তিনি ইউএনওকে অবগত করেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহসানুল আলম বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই চেয়ারম্যান ও সচিবের নিবন্ধন আইডি বন্ধ করে দিয়েছি। চরকাটারী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৭৯৫ জনকে জন্মনিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত চলমান আছে। এ বিষয়টি লিখিত আকারে বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি শিগগিরই তদন্ত কাজ শুরু করবে।