• ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কোটা নিয়ে রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা

Mofossal Barta
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০২৪, ১৩:৫১ অপরাহ্ণ
কোটা নিয়ে রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা
সংবাদটি শেয়ার করুন....
অনলাইন ডেস্কঃ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে সব পক্ষকে এ স্থিতাবস্থা মেলে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর করা আবেদনে শুনানির পর বুধবার এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।

প্রধান বিচারপতি আদেশে বলেন, ‘স্টেটাসকো মানে হলো স্থিতাবস্থা, সবাই আপনারা তা জানেন। অর্থাৎ এটা নিয়ে আর কোনো কথা হবে না।

লিভ টু আপিল (রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) না আসা পর‌্যন্ত যার যার কাজে ফিরে যান।’ এরপর আদালত আগামী ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানি ও আদেশের তারিখ রাখেন। 

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আর রিটকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। 

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত সব পক্ষকে শুনে আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। অর্থাৎ যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায়ই থাকবে। এই স্থিতাবস্থার কারণে হাই কোর্টের রায়টি এখন আর ইয়ে (কার‌্যকর) হবে না।

’ 

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আদেশেও আছে আন্দোলনকারীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তারা আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল বিভাগে দিতে পারবে। তাই এখন আর এই আন্দোলনের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। এখন উচিত এটা (আন্দোলন) বন্ধ করে নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে যাওয়া। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।’

এই স্থিথাবস্থার মানে কি, জানতে চাইলে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আগে (হাইকোর্টের রায়ের আগে) যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায়ই আছে।

স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাটারে (বিষয়বস্তুর ওপর)। সাবজেক্ট ম্যাটারে এটা (কোটা পদ্ধতি) বাতিল করা ছিল। যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো রয়েছে, সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি লাগবে না।’ 

আন্দোলনকারীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বললেন প্রধান বিচারপতি

আদেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সকল প্রতিবাদী কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদেরকে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো।

দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার‌্য মহোদয়, প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন মর্মে এই আদালত মনে করে।

স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য অত্র আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নিবে।

গতকাল মঙ্গলবার সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থী আবেদন করেন।

দুই শিক্ষার্থী হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান। পরে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।

শুধু এ মামলার শুনানির দিন ধার্যের জন্য গতকাল মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতির আদালত বসেছিলেন।

এর আগে গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপাতত বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।

সেদিন আপিল বিভাগ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি করেননি, ‘নট টুডে’ বলে আদেশ দেন। আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশিত হলে আপনারা ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করুন। আমরা শুনব।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আন্দোলন হচ্ছে, হোক। রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু।

গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওইদিন এই আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।

সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে, না কি বাতিল হবে এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।