• ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের সাথে এস আলমের ব্যবসা, বেনামি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা

Mofossal Barta
প্রকাশিত আগস্ট ২৭, ২০২৪, ১৭:২৩ অপরাহ্ণ
রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের সাথে এস আলমের ব্যবসা, বেনামি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা
সংবাদটি শেয়ার করুন....

 

বিশেষ প্রতিবেদক রাজশাহী ও ঢাকা থেকে :

 

একক গ্রাহকের ঋণসীমা লঙ্ঘন: ব্যাংক কেম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে দিতে পারবে না। এর মধ্যে ফান্ডেড ঋণ ১৫ শতাংশ ও নন-ফান্ডেড ১০ শতাংশ। গ্রুপটিকে এই সীমার অনেক বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত
পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট মূলধন ছিল ১০ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গ্রুপটির নামে-বেনামে মোট ঋণ আছে ১২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট মূলধনের ১২০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে সরাসরি নেওয়া ঋণও সীমার বেশি ছিল, প্রায় ৩৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৬২(১) ধারায় বর্ণিত সীমার লংঘন।

বেনামি প্রতিষ্ঠানেও নাবিলের কর্তাব্যক্তিরা: নাবিল গ্রুপের ঋণে এক গ্রাহকের সীমা লংঘন করায় ২০২৩ সালে ব্যাংকটির কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ব্যাংকটি থেকে নাবিল গ্রপের ঋণ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানার তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, ইসলামী ব্যাংকের ঋণ সুবিধাভোগী নাবিল গ্রপভুক্ত প্রতিষ্ঠান মাত্র ৬টি— নাবিল ফিড মিলস, নাবিল নাবা ফুডস, নাবিল অটো ফ্লাওয়ার, নাবিল কোল্ড স্টোরেজ, নাবিল অটো রাইস এবং শিমুল এন্টারপ্রাইজ। শেষের চারটির শতভাগ মালিকানা নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিনুল ইসলামের। অন্যদিকে নাবা ফার্ম এবং নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে নাবিল গ্রুপের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হলেও ব্যাংকটির তথ্যে দেখা যাচ্ছে এগুলোর মালিকানাতেও রয়েছেন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডি, পরিচালকসহ ৫ জন।

এর মধ্যে জাহান বক্স মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম, ইসরাত জাহান, এজাজ আবরার এবং আফরাত ইবনাথের ১৮ শতাংশ করে ৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আরও আশ্চর্যের বিষয়— প্রতিষ্ঠানটিতে যারা চেয়ারম্যান ও এমডি হিসেবে আছেন, তাদের মালিকানা মাত্র ৫ শতাংশ করে। তারা হলেন- চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ এবং এমডি মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল একটা অংশীদারী প্রতিষ্ঠান বলে দাবি ব্যাংকটির। এ প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ করে মালিকানা হারুন অর রশিদ ও মামুনুর রশীদের। অথচ মামুনুর রশীদ নাবিল গ্রুপেই সিপিএমও পদে কর্মরত। ব্যাংকের গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসও নাবিল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান নয় বলে দাবি করা হয়। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটিতে নাবিল গ্রুপের আমিনুল ইসলাম, ইসরাত জাহান, এজাজ আবরার এবং আফরাত ইবনাথের ১৮ শতাংশ করে মোট ৭২ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে চেয়ারম্যান শাকিল আহমেদ এবং এমডি রায়হানুল ইসলামের মালিকানা ১৪ শতাংশ করে। রায়হানুল ইসলামও নাবিল গ্রুপের একজন কর্মচারী।

বেনামি অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আনোয়ার ফিড মিলসের প্রপ্রাইটর বা পরিচালক হিসেবে নাজমুল হাসান ও নজরুল ইসলাম এবং সুলতান অ্যাসোসিটেসের প্রোপ্রাইটর বা পরিচালক হিসেবে মেসার্স শাহনুর আকতার এবং আতাবুল ইসলামের নাম রয়েছে। জামান সিন্ডিকেটের প্রোপ্রাইটর বা পরিচালক হিসেবে মো. রোকনুজ্জামান মিঠু এবং ইন্টারন্যাশনাল প্রডাক্ট প্যালেরে প্রোপ্রাইটর বা পরিচালক হিসেবে মোখলেছুর রহমানের নাম রয়েছে। মার্কেট মাস্টার এনালাইজার এবং এজে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি। সূত্রমতে, এই বেনামি প্রতিষ্ঠানগুলোও এস আলমের সৃষ্ট। এর বাইরে নাবিল গ্রুপের বনানীর ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংকটির নবাবপুর শাখা থেকে মেডিগ্রিন ইন্টারন্যাশনালের নামে ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, ফার্মগেট শাখা থেকে মার্টস বিজনেসের নামে ১ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা ও ভিআইপি রোড শাখা থেকে স্ট্রেইট লাইট ইন্টারন্যাশনালের নামে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়েছে ব্যাংকটি। এ ছাড়া ওই দিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউ থেকে এস আলম গ্রুপ ও তার পরিবারের নামে থাকা সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের তথ্য তলব করা হয়ছে। তবে আলাদাভাবে নাবিল গ্রুপের ঋণ নিয়ে কোনো তথ্য চাওয়া হয়নি।

নাবিল গ্রুপ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা, মাননীয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং মাননীয় দুদুক চেয়ারম্যান দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।