অনলাইন ডেস্কঃ
সরকার পতনের আন্দোলনের আগে পরে হামলায় সড়ক থেকে উধাও হয়ে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ফিরে আসা সদস্যদের মনোবল চাঙা করতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রামে ফিরে আসা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে শিক্ষার্থীরা, শিক্ষার্থীদেরকেও ফুল দিয়েছে পুলিশ সদস্যরা।
দেশের অন্যান্য জেলার মত চট্টগ্রামেও সোমবার ৭টি এলাকায় দেখা মিলল পুলিশের সদস্যদের, যদিও সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম।
মঙ্গলবার আরও ১১টি পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে এবং বুধবারের মধ্যে নগরীর সড়ক ব্যবস্থাপনা শতভাগ বাহিনীটির নিয়ন্ত্রণে আনা হবে বলে আশা করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বড় ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। তাদের মনোবল চাঙা করতে শিক্ষার্থীরাই দায়িত্ব নিয়েছে।
“শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও তাদের মনোবল চাঙা করতে তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। আশা করছি ভীতি কাটিয়ে আমাদের এ সহকর্মীরা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোপুরি কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন।”
নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একটা ভীতি জন্মেছে। সে ভীতি কাটিয়ে উঠার জন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ট্রাফিক সদস্যদের সমন্বয় করা হয়েছে।
“শিক্ষার্থীরা তাদের বরণ করে নিয়েছেন ফুল দিয়ে। আমাদের পক্ষ থেকেও শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়েছি। জোনের ডিসি, এডিসি ও এসিরাও বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে গিয়ে ট্রাফিক সদস্য ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।”
আবদুর রহমান নামে এক রিকশা চালক বলেন, ছাত্ররা ভালো কাজ করলেও তাদের অভিজ্ঞতা না থাকায় লাইন ঠিক করতে গিয়ে অনেক স্থানে জট লাগিয়ে ফেলত। এখন এই সমস্যাটা আর হবে না বলে আশা করছেন তিনি।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামীগের সরকারের পতনের পর বিভিন্ন থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়।
এসব ঝামেলায় অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন, আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাটে থেকেও উধাও হয়ে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি কর্মবিরতিও আহ্বান করেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা।
এ অবস্থায় সারা দেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। ৬ অগাস্ট থেকে সড়কে যান চলাচল ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সামলাতে মাঠে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের। সন্ধ্যার পর এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীরা এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাদের পাশাপাশি পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও দায়িত্বে ছিলেন।
রোববার বিকালে সচিবালয়ে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন।
সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়, শিল্পকলার মোড় (মাজার গেইট), ওয়াসা, টাইগার পাস, আগ্রাবাদ মোড়ে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখার দায়িত্বে তাদের পাশে শিক্ষার্থীদেরও দেখা গেছে। ছিল আনসার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও।
ট্রাফিক পুলিশ ফিরলেও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তাদের দায়িত্ব পালন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে নগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, “আগে ট্রাফিক সদস্যরা ক্লান্ত হলে পুলিশ বক্সগুলোতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারতেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় নগরীর সব পুলিশ বক্স ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশা করছি সবগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই সংস্কার করে পুরাদমে ট্রাফিক পুলিশ কাজ শুরু করবে।
ট্রাফিক পুলিশের দক্ষিণ জোনের অধীনে ওয়াসা ও টাইগারপাস মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
এই জোনের উপকমিশনার এনএম নাসির উদ্দিনও জানান, তার বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেছেন।
মঙ্গলবার নতুন করে নিউ মার্কেট, চকবাজার গুলজার মোড় ও শাহ আমানত সেতু এলাকায় ট্রাফিক মোতায়েন করার কথা জানান তিনি।
ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম জোনের উপকমিশনার তারেক আহম্মেদ জানান, প্রথম দিনে আগ্রাবাদ বাদামতল এলাকায় পুরোদমে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক সদস্যরা। আর চৌমুহনি মোড়ে কিছু সময় দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের সহযোগিতা করেছেন।
মঙ্গলবার থেকে চৌমুহুনী, দেওয়ানহাট, একে খান ও অলংকার মোড়ে পুরোদমে দায়িত্ব পালন করবেন সদস্যরা। এভাবে পর্যায়ক্রমে সবকটি এলাকায় ট্রাফিক সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
বন্দর বিভাগে নিমতলা এলাকায় ট্রাফিক সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানান উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বারিক বিল্ডিং মোড় ও সল্টগোলা ক্রসিংয়েও তাদেরকে মোতায়েন করা হবে।