• ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক ৬৩ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিদেশে অঢেল সম্পদ

Mofossal Barta
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
সাবেক ৬৩ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিদেশে অঢেল সম্পদ

সাবেক ৬৩ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিদেশে অঢেল সম্পদ

সংবাদটি শেয়ার করুন....

দুদকের অনুসন্ধান: অর্থ পাচার করে বিদেশে ফ্ল্যাট, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা লাভ ও দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করা ৬৩ বাংলাদেশির নাম জানা গেছে। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ প্রভাবশালীরা রয়েছেন। অনেকেই সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের পর নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। পরে তাদের কেউ কেউ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর আসনেও বসেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক জানায়, তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জন করে দেশ-বিদেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুদক তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো  বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিক হয়ে অন্য কোনো দেশের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দুদক সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ প্রায় ৩০০ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, পেশিশক্তি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। তাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে সম্পদ অর্জন ও নাগরিকত্ব গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। বিভিন্ন দেশে ২০ জনের ফ্ল্যাটসহ নানা সম্পদ রয়েছে। আটজনের বিদেশে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত অনুসন্ধানে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে। দুদকের তদন্ত চলছে। ভবিষ্যতে আরও অনেক নাম পাওয়া যাবে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সূত্র জানায়, বিদেশে তাদের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। দুদকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত কোনো দেশই সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সম্পদের তথ্য পাঠায়নি।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ওইসব মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপির অধিকাংশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে দুদক দেশ-বিদেশে তাদের সম্পদের খোঁজ করছে। অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে মামলার পর প্রত্যেককে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। মামলার আগে বা পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে রিমান্ডে তাদের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ওইসব প্রভাবশালীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব দুদকের তপশিলভুক্ত কোনো অপরাধ নয়। তবে যারা অনিয়ম, দুর্নীতি, হুন্ডি, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক, তাদের দুদক আইনের আওতায় আনা হবে। দ্বৈত নাগরিকদের সম্পদের তথ্য চেয়ে দুদক সংশ্লিষ্ট দেশে চিঠি পাঠিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সমকালকে বলেন, দ্বৈত নাগরিক হলে কেউ জাতীয় অথবা অন্য কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কেউ এ তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশ নিলে তা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। তখন তদন্ত করে কমিশন এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেবে। আর কেউ তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, দ্বৈত নাগরিকের আড়ালে কেউ হুন্ডি ব্যবসা, অর্থ পাচার, আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং করলে তা অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে দুদক আইনি ব্যবস্থা নেবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, দ্বৈত নাগরিক হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে এমপি হওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তারা নিজেরাই জানেন– দ্বৈত নাগরিক হয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। আবার তারা শপথ নিয়ে আরেক দফায় প্রতারণা করছেন। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হয়ে নানা সুবিধা অর্জন করেছেন; ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন– এ সবই প্রতারণা। এটা বহুমাত্রিক অপরাধ। যথাযথ আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হওয়া উচিত। কোনো জনপ্রতিনিধির দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রমাণ হলে নির্বাচন কমিশন তাঁর সদস্যপদ বাতিল করতে পারে। ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।