• ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলাশবাড়িতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমান লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে!

Mofossal Barta
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ
পলাশবাড়িতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমান লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে!

পলাশবাড়িতে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরির কারিগর উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমান লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আঃ রাজ্জাক সরকার গাইবান্ধা জেলা: বাংলাদেশে যে মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বাতিল করা হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ রহমানের বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে পলাশবাড়ি উপজেলায় কমপক্ষে ৭৬ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্ধান পাওয়া গেছে। এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও উত্তোলন করছে এবং তাদের অনেকের সন্তানরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি করছে বলে জানা গেছে।

প্রকাশ, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার ন্যায় গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলায়ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা হয়। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংশ্লিষ্ট সরকার ভাতাও প্রদান করছেন। ফলে বিভিন্ন উপজেলার যাচাই বাছাই কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা নিজেদের আখের গোছাতে শুরু করেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সাথে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্তির কাজ। এদের মধ্যে পলাশবাড়ি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ রহমান উল্লেখযোগ্য।

এদিকে, ২০১৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার জন্য স্ব স্ব উপজেলায় সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য অন লাইনে আবেদন চেয়ে সার্কুলার জারি করেন। সেই মোতাবেক সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অন লাইনে আবেদন করেন। আর যাচাই বাছাই এর জন্য কমিটি করে দায়িত্ব দেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের। সেই মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পৃষ্টপোষকতায়কমিটি করে যাচাই বাছাই করা হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগায় পলাশবাড়ি উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমান। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাসহ যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ভুয়া ভাবে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁদের ফাইলপত্র আটকে দিয়ে গোপনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যাচাই বাছাই তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করে সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু যারা উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমানের প্রস্তাবে রাজি হয়নি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তাদের মধ্যে কমপক্ষে ৫/৬ জনের ফাইলপত্র আটকে দেন। নির্ভরশীল সুত্র জানায়, এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, যাদেরকে ইতোমধ্যে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি, তাদেরকে ১০/১৫ দিনের মধ্যে নোটিশ করে ডেকে নিয়ে সাক্ষাতকার নেয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়নি।

সুত্র জানায়, পলাশবাড়ী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির কারণে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি, তাদের মধ্যে পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের খামার জামিরা গ্রামের মৃত. আঃ রহিম এর পুত্র মোঃ আবুল কাশেম ও একই ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের মৃত আব্দুস ছাত্তার মন্ডলের পুত্র শামছুল হক মন্ডল উল্লেখযোগ্য। মোঃ আবুল কাশেম ২৫/০২/২০১৪ ইং তারিখে অন লাইনে আবেদন করেন। তার ডিজি নং DG1170312 এবং শামছুল হক মন্ডল গত ১০/০৫/২০১৪ ইং তারিখে অন লাইনে আবেদন করেন। তার ডিজি নং DG1138227.
আবুল কাশেম দীর্ঘদিন ফাইলপত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে অবশেষে শোকে দুঃখে ব্যথিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।তবে তার পুত্র রঞ্জু মিয়া এখনও আশাবাদী রয়েছে।

সম্প্রতি আবুল কাশেমের পুত্র রঞ্জু মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক মন্ডল বলেন, তারা দীর্ঘদিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে পলাশবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা অফিসে ধর্না দিচ্ছেন। তাদের দাবি- সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্য জনক কারণে তাদেরকে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটিতে ডাকেননি বা নোটিশ প্রদান করা হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি”র সুপারিশও অগ্রাহ্য করেছেন। তারা আরো বলেন, উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমানের দাবিকৃত টাকা প্রদান না করায় তাদেরকে নোটিশ প্রদান করা হয়নি!

এক প্রশ্নের উত্তরে আবুল কাশেম এর পুত্র রঞ্জু মিয়া বলেন, ২০১৬ সালে পলাশবাড়ি উপজেলা কমান্ডার আঃ রহমান আমার আব্বার কাছে থেকে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। আব্বা তার কাছে বিভিন্ন খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিল, কিন্তু বাকি টাকা না দেয়ায় আব্বাকে আর যাচাই-বাছাই কমিটিতে ডাকা হয়নি। আবেদনকারী শামছুল হক মন্ডল বলেন, ওই সময় উপজেলা কমেন্ডার আঃ রহমান আমার কাছেও ৭০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি ১৬ হাজার দিয়েছিলাম। বাকী টাকা না দেয়ায় আমাকেও যাচাই-বাছাই কমিটিতে ডাকেনি।

যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল আমিন আনিছ বলেন, ওই সময় আমি ইউএনও সাহেবকে সবাইকে নোটিশ দিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির মুখোমুখি হওয়ার জন্য ডাকতে বলেছিলাম। কিন্তু ইউএনও সাহেব তখন বলেছিলেন, বাকি যে কয়েকটা রয়েছে, পরে একদিন ডেট করে ডেকে নিয়ে রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু এরপর থেকে তৎকালীন ইউএনও সাহেব রহস্যজনক কারণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ রহমান একজন ইউপি চেয়ারম্যান। তার সাথে সম্প্রতি তার ইউনিয়ন পরিষদে কথা হয়। তিনি উল্লেখিত অভিযোগ গুলো অস্বীকার করেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি- আমি আবুল কাশেম ও শামছুল হক মন্ডলকে চিনি না বলে তড়িঘড়ি করে ইউনিয়ন পরিষদ ত্যাগ করেন।

ন্ডার আঃ রহমান আমার কাছেও ৭০ হাজার টাকা চেয়েছি