• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শান্তি চুক্তির মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ নয়, ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন ম্যাক্রঁ”

Mofossal Barta
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫, ১২:০৫ অপরাহ্ণ
শান্তি চুক্তির মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ নয়, ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন ম্যাক্রঁ”

শান্তি চুক্তির মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ নয়, ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে বললেন ম্যাক্রঁ"

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আন্তজাতিক ডেস্ক: এই শান্তি অবশ্যই ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হবে না। এটা অবশ্যই গ্যারান্টি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না,” দুই নেতার বৈঠকের পর হওয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।

ট্রাম্প নিজে অবশ্য সিকিউরিটি গ্যারান্টি বা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন শান্তি নিশ্চিত করার খরচ ও বোঝা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং ইউরোপীয় দেশগুলোরও বহন করা উচিত।

অবশ্য ম্যাক্রঁও এতে সাড়া দিয়েছেন যে নিরাপত্তার খরচ বহনের ক্ষেত্রে আরও ন্যায্যতার বিষয়টি ইউরোপের অনুধাবন করা উচিত। তিনি বলেছেন রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি আলোচনার একটি পথ দেখিয়েছে।

যদিও দুই নেতা তাদের বৈঠকের সময় উষ্ণ কথাবার্তা বিনিময় করেছেন, তারপরও ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান নিয়ে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। পরে তারা ওভাল অফিসে প্রায় ৪০ মিনিট সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।

যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য ছিল তার মধ্যে একটি হলো যে কোনো ধরনের শান্তি চুক্তিতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।

ট্রাম্প বলেছেন তিনি যত দ্রুত সম্ভব একটি যুদ্ধবিরতি চেয়েছেন এবং এতে একমত হলে তিনি রাশিয়া সফরে গিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

ম্যাক্রঁ যদিও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে আরও কিছু বিবেচনার দৃষ্টিভঙ্গি নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি একটি বিস্তৃত শান্তি চুক্তির কথা বলেছেন যেখানে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষার গ্যারান্টি থাকবে।

আমরা দ্রুত শান্তি চাই। কিন্তু আমরা কোনো দুর্বল চুক্তি চাই না,” বলেছেন তিনি।

তারা দুজনেই অবশ্য শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি রাখা নিয়ে একমত হয়েছেন।

“তারা কোনো সংঘাতের অংশ হবে না। তারা সেখানে থাকবে শান্তির প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে,” ওভাল অফিসে বলেছেন তিনি।

ট্রাম্প এরপর বলেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটা গ্রহণ করবেন। “আমি তাকে এই প্রশ্ন করেছি। তার এতে কোনো সমস্যা নেই, ” বলেছেন ট্রাম্প।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন ‘এটা করার পেছনে তার যৌক্তিক কারণ রয়েছে’।

ট্রাম্প পুতিনকে একজন স্বৈরশাসক বলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে এ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

তিনি বলেছেন গত সপ্তাহে ফোনে কথা বলার পর তিনি রাশিয়ান নেতার সাথে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করছেন।

“আমি জানি না আমরা কখন কথা বলবো। এক পর্যায়ে আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করবো,” বলেছেন ট্রাম্প।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের তৃতীয় বার্ষিকীতে এ বৈঠক করলেন ম্যাক্রঁ ও ট্রাম্প।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দিনটি শুরু করেছেন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, যেখানে ‘ইউক্রেনিয়ানদের বীরত্বের তিন বছর’ এর কথা বলা হয়েছে।

পরে তিনি বৈশ্বিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কিয়েভে ওই অনুষ্ঠানে বিশ্ব নেতাদের অনেকে যোগ দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি যে চলতি বছরেই আমরা যুদ্ধ শেষ করতে পারবো”।

অন্য নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানের নেতারা ভিডিও লিংকে কথা বলেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি তাতে যোগ দেয়নি।

জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমেইয়ের মস্কো ও ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্কের বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন অনুষ্ঠানে বলেছেন: ‘আমাদের ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহে গতি বাড়াতে হবে’। তিনি বলেছেন এই যুদ্ধ ইউরোপের ভবিষ্যৎ সংকটের কেন্দ্রেই থাকবে।

সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে এই যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে। এতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ঐক্য ও ভূখণ্ডগত সংহতির প্রতি জাতিসংঘের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র এই রেজুলেশনের বিরোধিতা করেছে। এর পরিবর্তে তারা নিজেরাই একটি প্রস্তাব এনেছে যেখানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি ‘সংঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এতে রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করা হয়নি।

ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য নতুন করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে রাশিয়ার অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি এবং এর কথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’কে। এ ধরনের নৌযানগুলো নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়েছে এমন মেশিন টুলস ও ইলেকট্রনিকস, যা রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। তার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে রাশিয়াকে সহায়তা করতে ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সৈন্য মোতায়েনের অভিযোগ করা হয়েছে।