• ২৭শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণের মুখেও শান্ত ছিলেন রামাফোসা

Mofossal Barta
প্রকাশিত মে ২২, ২০২৫, ১৪:৪৫ অপরাহ্ণ
ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক আচরণের মুখেও শান্ত ছিলেন রামাফোসা

হোয়াইট হাউজের বৈঠক মাঝে মাঝেই উস্কানি ও বিব্রতকর মুহূর্তে গিয়ে ঠেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাথে বৈঠক এর চূড়ান্ত উদাহরণ। গতকাল বুধবারের ওই বৈঠকটি যেন ছিল তাকে হেনস্থা করার জন্য আগেভাগে প্রস্তুত করা সুসজ্জিত এক মঞ্চ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন বিশ্ব নেতাদের বুঝে যাওয়া উচিত যে ওভাল হাউজে আমন্ত্রণ পাওয়া মানেই সম্মানজনক নয়। বরং, ওই আমন্ত্রণের সাথে থাকে প্রকাশ্যে অপমানিত হওয়ার ঝুঁকিও।

হোয়াইট হাউজের বৈঠক মাঝে মাঝেই উস্কানি ও বিব্রতকর মুহূর্তে গিয়ে ঠেকে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সাথে বৈঠক এর চূড়ান্ত উদাহরণ। গতকাল বুধবারের ওই বৈঠকটি যেন ছিল তাকে হেনস্থা করার জন্য আগেভাগে প্রস্তুত করা সুসজ্জিত এক মঞ্চ।

তবে এবারের পর্বে বাড়তি অনুষঙ্গ হিসাবে ছিল হঠাৎ আলো নিভিয়ে ফেলা, বড় স্ক্রিনে দীর্ঘ ভিডিও চালানো আর পুরনো খবরের কাটিংয়ের স্তূপ এনে হাজির করা।

পুরো প্রস্তুতি থেকে এটি স্পষ্ট যে এই দৃশ্যপাটের পুরোটাই আগেভাগে তৈরি করা।

টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে কিছুটা স্বাভাবিক আলাপচারিতা চলছিলো। এরমধ্যেই একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করানো যাবে যে দক্ষিণ আফ্রিকায় “হোয়াইট জেনোসাইড” (শ্বেতাঙ্গদের গণহত্যা)-এর ঘটনা ভিত্তিহীন?

এই প্রশ্নের উত্তর প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট-ই দেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ের সত্যতা যাচাই করার জন্য মি. ট্রাম্পকে “দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের কথা শুনতে হবে।”

তখনই ডোনাল্ড ট্রাম্প সহকারীকে নির্দেশ দিলেন, “লাইট নেভাও, টিভি চালাও”। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা মি. রামাফোসাকে “কিছু বিষয়” দেখাতে চেয়েছিলেন।

বড় স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে "হোয়াইট জেনোসাইড" বিষয়ক বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,বড় স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছে “হোয়াইট জেনোসাইড” বিষয়ক বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও

রামাফোসা অবশ্য চলতি বছর একটি বিতর্কিত আইন অনুমোদন করেছেন, যা ক্ষতিপূরণ ছাড়া জমি অধিগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এখনও সেই আইন বাস্তবায়ন হয়নি।

এছাড়া, ভিডিওতে যেসব আলোচিত রাজনৈতিক ভাষণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো থেকেও তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছেন। তবে এই বৈঠকে তিনি প্রস্তুত ছিলেন।

তিনি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নন, বরং দেশটির বর্ণ বৈষম্য বিলোপ আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং তিনি সেই আলোচক যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেত সংখ্যালঘু শাসনের অবসান ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই অন্য দেশের নেতাদের কৌশলগত প্রশংসাবাক্য বুঝতে পারেন না। আর এবার এই বিষয়টিই কাজে লাগিয়েছেন সিরিল রামাফোসা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গলফ খেলতে পছন্দ করেন, এ কথা সবাই জানে। তাই সিরিল রামাফোসা যখন কূটনীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে আলোচনার টেবিলে দুই শীর্ষ গলফার এর্নি এলস ও রেটিফ গুসেনকে নিয়ে এসেছেন, তখন এটিকে আর ছকে বাঁধা কোনও আলোচনা বলে মনে হয়নি।

আর, পুরনো খবর বের করে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের ওপর চড়াও হলেও হোয়াইট হাউসে এই দুই শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান গলফারের উপস্থিতি যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করেছে, তা বৈঠকে উপস্থিত কারোরই চোখ এড়ায়নি।

বৈঠকে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা এই দুই গলফার যতটুকু সময় ধরে অভিমত দিয়েছেন, প্রায় সমান সময় ধরে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট রামাফোসা।

যদিও মি. রামাফোসা বেশিরভাগ সময় সংযত থেকেছেন, ভেবেচিন্তে অল্প কথা বলেছেন।

তবে এটিই ছিল মি. রামাফোসার কৌশল। তিনি হয়তো এমনটাই চেয়েছিলেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা

ছবির উৎস,Getty Images

ছবির ক্যাপশান,ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা

ওই দুই গলফার এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষিমন্ত্রী, যিনি নিজেই একটি বিরোধী দলের সদস্য এবং বর্তমানে জাতীয় ঐক্য সরকারে আছেন, এই তিনজনের উপস্থিতিই যেন রামাফোসার চারপাশে এক ধরনের কূটনৈতিক ‘গোল্ডেন ডোম’ তৈরি করেছিলো এবং সেটিই কাজ করেছে।

তবে মি. ট্রাম্প বারবার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের আলোচনায় ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, অনেক কৃষককে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে জায়গা দিয়েছেন।

তবে মি. রামাফোসা এসবের কোনও উস্কানিতেই সাড়া দেননি।

এক পর্যায়ে গলফার ও কৃষিমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে বলেন, “আফ্রিকায় যদি সত্যিই শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের গণহত্যা চলতো, তাহলে তারা আজ এখানে থাকতেন না। আমি আপনাকে হলফ করে এ কথা বলছি।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প রামাফোসাকে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করলেও উল্টো দিক থেকে কোনও প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাতে তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ বলা যাবে না।

এই অভিনয়ধর্মী কূটনীতির ধরনটি ওভাল অফিসে সদ্য আগত অতিথির উদ্দেশ্যে যতটা, ততটাই বা তার চেয়েও বেশি যুক্তরাষ্ট্রের ঘরোয়া দর্শকদের লক্ষ্য করে করা।

‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ মিশনের অন্যতম মূলমন্ত্র হলো জনগণের ক্ষোভ ও অভিযোগকে চাঙ্গা রাখা। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানেন যে তার সমর্থকরা কী দেখতে চায়।

তবে এখন যেহেতু কিছু বিদেশি নেতা এই কৌশল সামলাতে শিখে ফেলেছেন, তাই এখন হয়তো মি. ট্রাম্পকে আগের মতোই প্রভাব ধরে রাখার জন্য পরিকল্পনায় কিছুটা বদল আনতে হবে।