একজন ব্যবসায়ী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এগুলো নিয়ে কেউ অভিযোগ করবে না। তার দাবি এদের ম্যানেজ করেই এখন চলতে হচ্ছে। পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় একজন বলেন, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ এলাকায় সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি মানুষ খুন এবং সশস্ত্র হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে।
“আমরা গ্রামের মানুষ অনেক আতঙ্কিত। দেখা যাচ্ছে , গ্রামের বাজার ঘাট সন্ধ্যার পরেই বন্ধের একটা আভাস দিচ্ছে। এ জিনিসটা আসলে ভালো দিক নয়,” বলছিলেন তিনি।
তার কথায়, “থানা ধ্বংস করা হইছে। মনে করেন, কিছু অস্ত্রপাতি অবশ্যই বাইরে গেছে। ওইগুলো তো এখনও সেভাবে উদ্ধার করতে পারেনি। এই জন্যই তো সমস্যাটা এত বেশি।”
যদিও তার পরিবারের দাবি, গত নয় বছরে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং তিনি অতীতে সম্পৃক্ত থাকলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোনো ‘আন্ডারগ্রাউন্ড বাহিনীর’ সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
দক্ষিণাঞ্চলে চরমপন্থী সংগঠনগুলো দীর্ঘ সময় নিস্ক্রিয় ছিল।
৫ই অগাস্ট থানা থেকে অস্ত্র লুট এবং জেল থেকে অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা অনেকে বেরিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নাজুক হলে কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে বলেও ধারাণ করা হচ্ছে।
এই অঞ্চলে আবারো চরমপন্থী গ্রুপগুলো নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গোয়েন্দা তৎপরতা এবং কার্যক্রম করছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানান কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
“ঝিনাইদহে যেটা ঘটলো এবং আরও কিছু যে পারিপার্শ্বিক ঘটনা ঘটতেছে, সেগুলো আমরা দেখতেছি। যেহেতু বেশিরভাগ অফিসারই নতুন, তাদেরকে জানতে একটু সময় লাগতেছে। আসলে যে ঘটনাগুলো ঘটতেছে, কারণটা কী- আমরা গভীরভাবে জানার চেষ্টা করতেছি।”
ধর্ষণ নিয়ে উদ্বেগ
সারা দেশে হত্যা, খুন, ছিনতাই, ডাকাতির পাশাপাশি ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অন্তত ৩৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১০টি ঘটনায় কোনো মামলাই হয়নি।
চলতি মাসেও বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।
ধর্ষণ মামলা এবং নারীদের আইনি সহায়তা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছেন মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী। তিনি বলেন, “ভুক্তভোগীকে কেন্দ্র করে যে সাপোর্ট প্রয়োজন, সেটা কিন্তু এখন থানাগুলোতে নেই এবং বেশিরভাগ কেইস কিন্তু থানা পর্যন্ত আসছে না। এই জন্য কিন্ত আপনি অনেক খবর পাবেন না। তৃণমূলের যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলো কিন্তু ভয়াবহ অবস্থা। “
সালমা আলীর পর্যবেক্ষণে দেশে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের পরিস্থিতি মারাত্মক উদ্বেগের।
“এখন কিন্তু দুই রকম অপরাধী আছে। একটা হলো স্যাডিস্ট-রেপিস্ট, তারা একটার পর একটা ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর অনেক অপরাধী জেল থেকে বের হয়ে গেছে, এরকম কিন্তু অনেক আছে এবং তারা কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট অপরাধ গোষ্ঠী তৈরি করছে।”
“আমি মনে করি পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। এর জবাবদিহি সরকারকে দিতে হবে। আমরা সাহায্য করতে চাই, সহযোগিতা করতে চাই। “
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা তাদের রয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘ডেভিল হান্ট অপরেশন’ নামের বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
কিন্তু এই অভিযান কতটা কার্যকর প্রভাব ফেলছে, সে প্রশ্নও রয়েছে।