কোনও প্রকার পূর্বসংকেত না থাকায় এগুলোকে আমাদের কাছে ‘হঠাৎ করে মারা যাওয়া’ তথা অপ্রত্যাশিত মৃত্যু মনে হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী এর সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।
এর অর্থ, “ফুসফুসের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেছে।” ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুত চিকিৎসা না করালে পালমোনারি এম্বোলিজমের কারণে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন– হঠাৎ করে শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস চলা, প্রচুর ঘাম হওয়া, চিন্তিত বোধ করা, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি।
পাশাপাশি কারও কারও বুক, বাহু, পিঠ, কাঁধ, গলা অথবা চোয়ালে তীব্র ব্যথা হতে পারে। ব্যথার তীব্রতা এত বেশি যে প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে।
যারা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বা অন্যান্য হার্টের ব্যাধিতে আক্রান্ত কিংবা যাদের পরিবারে রক্ত জমাট বাঁধাসহ এসব রোগের ইতিহাস আছে, তারা পালমোনারি এম্বোলিজমে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকে।
এছাড়া, বয়স যদি ৬০ বছরের বেশি হয় বা কারও ওজন যদি অতিরিক্ত হয়, তাহলে তারাও ঝুঁকিতে থাকে।
স্ট্রোক
স্ট্রোকের সাথে অনেকে হার্ট অ্যাটাককে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দু’টি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা।
স্ট্রোক মূলত মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত হানে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মস্তিষ্কের কোনও অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে গেলে স্ট্রোক হয়।
এই স্ট্রোক বিশেষত হেমোরেজিক স্ট্রোক, হঠাৎ মৃত্যুর আরেকটি প্রধান কারণ।
সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কারণ এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছায়। কোনও কারণে মস্তিষ্কের কোষে যদি রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, রক্তনালী বন্ধ হয়ে যায় বা ছিঁড়ে যায় তখনই স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা না গেলে রোগীর পঙ্গুত্বের পাশাপাশি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। অনেকে স্ট্রোক হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যান। এ কারণে আর চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম এর আগে বিবিসি বাংলাকে কারও মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো– আচমকা শরীরের কোনও একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা, জিহ্বা অসাড় হয়ে মুখ বেঁকে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো, বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি, ইত্যাদি।
এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে, দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী যত অসংক্রামক ব্যাধি আছে, সেগুলোর মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদরোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। উন্নত বিশ্বের তুলনায় নিম্ন আয়ের দেশে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি বলে মত সংস্থাটির।
প্রতিরোধের উপায় কী?
হঠাৎ মৃত্যু অনেক কারণে হতে পারে এবং একেক কারণের জন্য সমাধানও একেক রকম।
তবে সামগ্রিকভাবে বললে এর একমাত্র সমাধান সুশৃঙ্খল জীবন, বলছিলেন ডা. আজাদ।
তিনি বলেন, “যেগুলোর কথা বলা হলো, এই অবস্থাগুলো একবার হলে বার বার হয়। তাই, ধরা পড়ার সাথে সাথে সতর্কতা নেওয়া যেতে পারে। তবে অনেক সময় সতর্ক থাকলেও মারা যেতে পারে।”
ডাক্তাররা এই হঠাৎ মৃত্যু’র বিষয়গুলো নিয়ে খুব ভয়ে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কারণ এসবের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর আর্টিফিশিয়াল লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়।”
কিন্তু বেশিরভাগ রোগীই সেই সুবিধাটা পায় না। ফলে, অপ্রত্যাশিত মৃত্যু নেমে আসে।
তবে এই পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সেজন্য তিনি সুশৃঙ্খল জীবনাচরণের প্রতি জোর দিয়েছেন।
“নিয়ম সবার জন্য সমান। যার ডায়াবেটিস আছে, তার জন্যও যা নিয়ম, হার্টের রোগীর জন্যও একই নিয়ম। তা হলো– ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল, ব্যালেন্সড ডায়েট, এক্সারসাইজ।”
সেইসাথে, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন সবাইকে তিনি। তিনি আরও বলেছেন যে শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ, “ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”
তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগী শেষ মুহূর্তে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু এর পরিবর্তে সমস্যা বড় হওয়ার আগেই, অর্থাৎ শুরুতেই চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা দরকার।