ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় বংশোদ্ভূত খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাচেষ্টা করার অপরাধে নিউ জার্সির এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের চাটাউকুয়া কাউন্টির আদালতে এই রায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্কিন নাগরিক ২৭ বছর বয়সী দোষী হাদি মাতার নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। ৩০ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। চাটাউকুয়া কাউন্টির আদালতে দুই সপ্তাহ শুনানির পর রুশদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় হাদিকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত। আগামী ২৩ এপ্রিল তার সাজা ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১২ আগস্ট নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারী মঞ্চে উঠে রুশদি ও তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর হামলা চালান। হত্যাচেষ্টা হামলায় সালমান গুরুতর আহত হন। তার লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি একটি চোখে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। হাতের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাতের কর্মক্ষমতাও চলে গেছে।
৭৭ বছর বয়সী সালমান রুশদি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ঐতিহাসিক শাটাকোয়া ইনস্টিটিউশনের মঞ্চে থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে তার দিকে ছুটে আসতে দেখেন। ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, হামলাকারীর চোখ দেখে তিনি মুষড়ে পড়েন। ওই চোখ গাঢ় কালো থাকায় দেখতে খুব হিংস্রও লাগছিল।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তাকে ঘুষি মারা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে বুঝতে পারেন, তাকে মোট ১৫ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে- তার চোখ, গাল, ঘাড়, বুক, ধড় ও উরুতে ক্ষত রয়েছে।
হত্যাচেষ্টার দিন রুশদির সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন হেনরি রিস। সেই সময় তিনিও মাথায় আঘাত পান। এই হত্যাচেষ্টার জন্যও হাদি মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
১৯৮১ সালে রুশদির লেখা বই ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ এর মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। তবে ১৯৮৮ সালে তার চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে অনুপ্রাণিত উপন্যাসটি মুসলমানদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।
১৯৮৮ সালে বইটি প্রকাশের পর কয়েকটি দেশে নিষিদ্ধ করা হয়। বুকারজয়ী এই লেখক অসংখ্য মৃত্যু হুমকি পেতে থাকেন।
বইটি প্রকাশের প্রায় এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা দেয়।