ওদিকে বনশ্রীতে এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ঢাকার ধানমন্ডির শংকর এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একদল সশস্ত্র ব্যক্তির মহড়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা মসজিদে মাইকে ঘোষণা দেন যে, মহল্লায় ডাকাতদল প্রবেশ করেছে। সেসময় সেখানকার আলী হোসেন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ১০ থেকে ১২ জনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
এর জের ধরে ১৯শে ফেব্রুয়ারি রাতে ওই এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে দুইজন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিলো আইএসপিআর।
পুলিশের হিসেবেই চলতি বছর জানুয়ারিতে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ২৯৪ জন। এ সময়ে ১৭১টি চুরি, ৭১ ডাকাতি, ১০৫ অপহরণ এবং নারী ও শিশু নিপীড়নের ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৪৪০টি।
কেন এমন পরিস্থিতি, কী করছে বাহিনীগুলো?
সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে। পুলিশও গত বছর অগাস্টের পটপরিবর্তনজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে পূর্ণোদ্দমে কাজ করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন।
ঢাকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই অনেক সময় পুলিশের দেখা মিলছে না। নগরীর সড়ক থেকে শুরু করে হাইওয়েগুলোতে পুলিশের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ে না।
এই সুযোগে প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ হয়ে উত্তরা পর্যন্ত সড়কে প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। কাকরাইল থেকে মহাখালী হয়ে রাস্তাতেও একই অবস্থা।
সংসদ ভবন থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুরের পুরো এলাকা ঘুরলে চোখে পড়বে পুলিশের নগণ্য উপস্থিতি। আদাবর, শেখেরটেক, বছিলাসহ ভেতরের এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাং সদস্যরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাহলো রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা আটক ও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনো কাটিয়ে ওঠতে পারেনি বাহিনীটি।
এছাড়া যেখানেই যা ঘটনা ঘটুক, তাতে এখন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পুলিশকে কাজ করতে হচ্ছে। এগুলো হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র সমন্বয়ক, সরকার বা মন্ত্রণালয়, বিএনপি, জামায়াত এবং স্থানীয়ভাবে এখনকার প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে সারাদেশে কয়েকটি থানাতেও ‘মব’ হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আবার অনেক পুলিশ সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। আবার চাকরিতে আছেন, কিন্তু অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ বিপদ এড়াতে গা বাঁচিয়ে চলতে চাইছেন।
বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলছেন, “আইনশৃঙ্খলার যারা অবনতি ঘটাচ্ছে বা চেষ্টা করছে তেমন সব ডেভিলকেই ধরতে হবে।”
এখন অপরাধীরা মনে করছেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযানের টার্গেট হলো শুধু রাজনৈতিক ডেভিলরা,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. হক।
তিনি বলেন, পুলিশের একটি পেশাগত অন্তর্নিহিত শক্তি থাকে, যা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন বিতর্কিত হবার ভয় কিংবা অন্য কোনো কারণে সেটি দৃশ্যমান নয় বলেই আইনশৃঙ্খলার ক্রমাগত অবনতি ঘটছে।
আজকের ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন পুলিশকে তিনি দায়িত্ব নিয়ে যে অবস্থায় পেয়েছিলেন, এখন তার চেয়ে উন্নতি হয়েছে।
“তারা আরও ভালো অবস্থায় যাবে। তাদের কমান্ডাররা চেষ্টা করছে,” বলেও দাবি করেন তিনি।