সেনাপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদসহ বিভিন্ন বিষয়ে বার বার সতর্ক করে কঠোর ভাষায় এই বক্তব্য দিয়েছেন মঙ্গলবার ঢাকায় রাওয়া ক্লাবে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের হত্যাকাণ্ডে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের স্মরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সতর্ক করে বলেছেন, নিজেরা কাদা-ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। তিনি এ-ও বলেন, “এই দেশ সবার। আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।”
বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সংস্কার, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এই দুই দলের মত বিরোধ অন্যান্য দলের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। এসব ইস্যুতে দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান এখন দৃশ্যমান।
তাদের সঙ্গে নতুন দলের সম্পর্ক কি থাকছে, তারা কতটা সম্পৃক্ত থাকছেন-এখন এসব প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন দল।
উপদেষ্টা পদে থেকে দল গঠনের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্নও সামনে এনেছে। বিশেষ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ওই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
দল গঠনের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে, এমন অভিযোগও করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।
সেই প্রেক্ষাপটে ছাত্র নেতাদের অনেকে মি: আলমগীর ও বিএনপির সমালোচনায় নেমেছিলেন। সেটা বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়িয়েছে।
রাজনৈতিক পক্ষগুলোর বিতর্ক, বিরোধ বা বিভেদের কারণে নানারকম সংকট তৈরি হচ্ছে; সাধারণ মানুষের মধ্যেও আস্থার অভাব দেখা দিয়েছে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সরকারও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এমন এক প্রেক্ষাপটেই সেনাপ্রধান পরিস্থিতির ব্যাপারে সতর্ক করলেন। তিনি তার বক্তব্যে কয়েক বার ‘সতর্ক’ শব্দের ব্যবহার করেছেন। এ ক্ষেত্রে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হ্ওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা আছে। তবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিবিসি বাংলাকে বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কিছু নেই। এই বক্তব্য তার ভালই লেগেছে। কারণ দেশে এখন সবার ঐক্য প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাদা-ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা উচিত বলে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাজনীতিতে ঐক্যের জায়গায় বিভক্তির কারণে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেটাই সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এসেছে।
যদিও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, এই দুই দলই নানা ইস্যুতে একে অপরের সমালোচনায় লিপ্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন বেড়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মতিউর রহমান আকন্দ অবশ্য বলেছেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সঙ্গে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার বিষয় কেন এলো, এটি সহ সেনাপ্রধানের বক্তব্যের সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা দলে আলোচনা করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
অন্যান্য দল ও জোটগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আস্থা কি ফেরাবে
নিজের ভিন্ন কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই, এমন কথাও এসেছে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যে। তার এ কথা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
তবে রাজনীতিকদেরই অনেকে মনে করেন, দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা মবের দৌরাত্ম চলছে। একই সঙ্গে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি থামানো যাচ্ছে না। আইশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থার সংকট বেড়েছে।
সবদিকে যখন বিশৃঙ্খলা, তখন এ সরকার সামলাতে পারছে না, সামরিক শাসন আসতে পারে কি না- এখন এই আলোচনাও উঠছে বিভিন্ন মহলে।
এ ধরনের পরিস্থিতিতেই সেনাপ্রধান বললেন, তার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই। তিনি নির্বাচনের কথা বলেছেন।
ন্যূনতম বা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, সেটাই এখন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সবার সেদিকেই নজর দেওয়া উচিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, দেশে অস্থির পরিস্থিতিতে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে সেনাপ্রধানের বক্তব্য।