• ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কাজীপুরে মোবাইল দেখে পরিক্ষা দেয়ায় ১১ পরিক্ষাথী বহিষ্কার

Mofossal Barta
প্রকাশিত জুলাই ১০, ২০২৪, ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ
কাজীপুরে মোবাইল দেখে পরিক্ষা দেয়ায় ১১ পরিক্ষাথী বহিষ্কার
সংবাদটি শেয়ার করুন....

কাজীপুর থানা প্রতিনিধি,
মো: পারভেজ সরকারঃ

দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রশ্নপত্র ও সমাধান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে একটি কেন্দ্রের প্রায় সাতশ পরীক্ষার্থী। কেন্দ্রের কক্ষে বসেই স্মার্টফোনে পাওয়া সেই সমাধান দেখে উত্তরপত্রে লেখেন পরীক্ষার্থীরা। এমন চিত্র সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের। এই বিদ্যালয়টিই ওই অঞ্চলের এইচএসসি পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র। যা শুধুমাত্র করা হয়েছে মনসুরনগর ইউনিয়নের আলহাজ্ব ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের জন্য।

গত রোববার (৭ জুলাই) ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্র পরিদর্শনে যান কাজিপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আক্তার। সেখানে গিয়ে দেখতে পান পরীক্ষার্থীরা স্মার্টফোন দেখে উত্তরপত্রে সমাধান লিখে যাচ্ছে। এসময় ১১ জন পরীক্ষার্থীকে হাতেনাতে ধরে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করেন। এ কাজে সহায়তা করার জন্য শেফালী বেগম নামের ওই কেন্দ্রের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা কক্ষের পাশ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৭৯টি স্মার্টফোন। যেগুলো নকলের কাজে ব্যবহৃত হতো।

স্থানীয়রা জানান, কেন্দ্র কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এমন বন্দোবস্ত করেছেন একটি চক্র। ‘মিশন এ প্লাস’, ‘রাসেলস ভাইপার’ ও ‘করোনা ভাইরাস’ নামের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে চলছে এমন কার্যক্রম। আলহাজ্ব ফরহাদ আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও কেন্দ্র সচিবসহ কেন্দ্র কমিটির সরাসরি যোগসাজশে বছরের পর বছর এ ভাবেই চলছে প্রশ্নফাঁস ও নকল বাণিজ্যের মহোৎসব। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস থেকে কেউ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান না বললেই চলে। এভাবে অবাধে প্রশ্নফাঁস ও নকল করে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকায় প্রতি বছরই ভালো ফলাফল করে আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ কারণে পাসের জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার শিক্ষার্থীরাও নদী পার হয়ে এই কলেজে পড়তে আসে। এই পরীক্ষা কেন্দ্রে যে মোবাইল ফোন দেখে পরীক্ষা দেওয়া যায় তা এলাকার সবারই জানা।

ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা কার্যক্রম দেখভালের জন্য দুই জন ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন কাজিপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পলাশ কুমার ভৌমিক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ। পরীক্ষা চলাকালীন তারা কেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন। তাদের উপস্থিতিতেই চলে এমন নকল বাণিজ্য। ট্যাগ অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা গেটে চেক করে পরীক্ষার্থী প্রবেশ করাই। পরীক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে আসে আমরা জানতাম না।’ অন্য ট্যাগ অফিসার পলাশ কুমার ভৌমিককে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

কেন্দ্র সচিব আব্দুল খালেকের মোবাইল ফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে ফরহাদ আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শুধু আমার কলেজের শিক্ষার্থীরাই ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। আমি নকল বাণিজ্যের সাথে জড়িত না। আপনি কেন্দ্র সচিবের কাছে সব তথ্য নেন।’ বলে ফোন কেটে দেন।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘হাতেনাতে ধরা পড়া ১১ জনকে পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ৯ জন কক্ষ পরিদর্শককে অব্যহতি দেয়ার জন্য কেন্দ্র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র সচিব পরিবর্তন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সঠিক তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তিন কার্যদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন দেবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ বরাবর সেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তারাই পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।