• ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবজি-চালের দরে ঊর্ধ্বগতি, বৃষ্টি বন্যাকে দায়

Mofossal Barta
প্রকাশিত জুলাই ১২, ২০২৪, ২০:৪৫ অপরাহ্ণ
সবজি-চালের দরে ঊর্ধ্বগতি,  বৃষ্টি বন্যাকে দায়
সংবাদটি শেয়ার করুন....

অনলাইন ডেস্কঃ
সাপ্তাহিক ছুটির দিন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি পেরিয়ে যারা ঢাকার বাজারে গেছেন, তাদেরকে বেশ কিছু পণ্যে বাড়তি খরচ করতে হয়েছে।

চাল, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, সবজির দাম দিয়েছে বড় লাফ। দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বে বন্যা পরিস্থিতিতে বাজারে কাঁচামালের সরবরাহও কিছুটা কম।

কারওয়ানবাজারে আসা ক্রেতা বিল্লাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবকিছুর এত দাম যে, প্রয়োজনের তুলনায় অল্প অল্প করে কিনতে হচ্ছে। কোনো সবজির দামও ৫০ টাকার নিচে নাই।”

কারওয়ানবাজারে তার ৫০ টাকায় সবজি পাওয়া যায়, এলাকার বাজারে একই সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকে।

কারওয়ানবাজারে ৫০ টাকার নিচে সবজি নেই

বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে বাদানুবাদের ঘটনা দেখা গেছে।

কারওয়ানবাজারে বাজারে সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে ঢেঁড়স, পটল ও ধুন্দল। এগুলোর দামও প্রতি কেজি ৫০ টাকা। অন্য সকল সবজির দাম এরচেয়ে বেশি।

শসা ও বেগুন মানভেদে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারে ৫০ টাকা কেজির নিচে সবজি নেই। পাড়া মহল্লার বাজারে ৮০ টাকার নিচে পাওয়াই ভার।

কারওয়ানবাজার থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইস্কাটনেই একই সবজির দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি, কাঁচামরিচ বেশি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল কদ্দুস বলেন, “বর্ষার জন্য গাছ নষ্ট হয়ে যায়, মাল কম থাকে, কৃষকও দাম বাড়ায়। সব মিলিয়ে বর্ষার এই সিজনটায় দাম একটু বাড়ে।”

চালের দামও বাড়তি

সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে দুই থেকে চার টাকা করে বাড়ার তথ্য জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৬ টাকায়, বিআর ২৮ চাল ৫০ থেকে ৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৭৮ টাকা, গুটি চাল ৪৬ থেকে ৫০ টাকা ও পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে।

আর খুচরায় এসব চাল পাইকারি দামের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি মার্কেটের পাবনা শস্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারীরা মোশাররফ হোসেন বলেন, “গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে বিআর-২৮ জাতের চালের দাম বাড়ছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। বাকিগুলোর বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা।

গত সপ্তাহের তুলনায় চালের দাস কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে।

এই দোকানের বিক্রেতা জিল্লাল হোসেন বলেন, “দেশে পর্যাপ্ত চাল আছে, সরবরাহও ঠিকঠাক দেখছি। কিন্তু মিলগেটেই দেখি দাম এক সপ্তাহ ধরে বাড়তি।

“জিজ্ঞেস করলাম বাড়ল কেন? জানালো কৃষকরা নাকি দাম বেশি নিছে। আবার কয় বৃষ্টি-আন্দোলনের কারণে সরবরাহ কম। এসব খোঁড়া যুক্তি দেয়। আসলে সিন্ডিকেট এতদিন ঠান্ডা ছিল এবার সরব হইছে।”

কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা শহিদুল্লাহ বলেন, “চালের ঘাটতি নাই, তবে বন্যার কারণে সরবরাহ কম। পেঁয়াজ-আলুর মত চালে খুব বেশি বাড়ে নাই। পাইকারিতে চালের দাম ৩ টাকা বাড়লে খুচরা বাজারে আরও বেশি টাকা বাড়িয়ে বেচে। এজন্য অনেকে মনে করে দাম অনেক বাড়ছে।”

তিনি বলেন, “কৃষকের ধান লাগানোর আগে থেকে শুরু করে চাল প্রস্তুত করতে অনেকগুলো ধাপ আছে। কিন্তু আলুতে এত ধাপ নাই, খরচও নাই কাজও নাই। তাহলে আলুর দাম কেন ৬০ টাকা? চালের চেয়ে আলুর দাম কেন বেশি হবে? এজন্য এখন চালের যে দাম সেটা ঠিকই আছে।”

পেঁয়াজের দামে আরও লাফ

কারওয়ানবাজারে খুচরায় পেঁয়াজের কেজি এখন ১২০ টাকা, পাড়া-মহল্লায় দাম ১২৫ থেকে ১৩০। আর বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে, যা পাড়া-মহল্লায় বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে আগের সপ্তাহে পেঁয়াজের দর ছিল মানভেদে ৯৫ থেকে ১১০ টাকা, চার সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা।

রোজার ঈদের আগে পেঁয়াজ পাওয়া গেছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। ঈদ শেষে এমন কোনো সপ্তাহ পাওয়া যায়নি যে সময় দাম বাড়েনি।

পেঁয়াজের দর সপ্তাহে সপ্তাহে বাড়ছে। এবারও বেড়েছে ১০ টাকা।

ভারত থেকে আমদানির পরেও বাজার ঠান্ডা হয়নি। তবে ভারত থেকে যে সময় পেঁয়াজ আমদানি আবার শুরু হয়, তখন দেশি পেঁয়াজ ছিল ৭০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজের দর এর চেয়ে বেশি পড়ার পর ক্রেতা ছিল না। আমদানিকারকরা লোকসানের কথা জানান, এরপর থেকেই বাড়ছে দেশি পেঁয়াজের দর।

গত বছর থেকেই আলু ও পেঁয়াজের দর বাড়তে শুরু করে। গত বছরের এই সময়ে বাড়তি দরের চেয়েও এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ। টিসিবির হিসাব বলছে, গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজের দর ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা এমরান হোসেন বলেন, “বড় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াইতাছে। আমরা যাগো কাছ থেইকা কিনি তারা কয় এহন মাল কম, দাম বেশি।”

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পাইকারি দোকান মেসার্স আল্লাহর দান ভান্ডারের বিক্রেতা মো. হোসেন জানান, তিনি শুক্রবার ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিন দিন আগে দাম কম ছিল ১০ টাকা।

বাজারে অন্য সবকিছুর তুলনায় দাম কিছুটা কম রয়েছে ব্রয়লার মুরগির। প্রতি কেজি পাওয়া যাচ্ছে ১৮০ টাকায়, সোনালি মুরগির কেজি এখন ৩০০ টাকা। মাঝে কিছুটা কমলেও মুরগির লাল ডিমের দাম আবার ৫০ টাকা হালি ছুঁয়েছে।

গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।