বরিশাল ব্যুরো প্রধানঃ
রবিবার রাত ১২ টা থেকে টানা প্রায় ৩০ ঘন্টার তাণ্ডব শেষে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় বিদায় নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। বিদায়ের আগমুহূর্তে গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে রেখে যেতে তার তাণ্ডব চিহ্ন। এরফলে বরিশালের রূপাতলীতে দেয়াল চাপায় ২ জন ও বাকেরগঞ্জে গাছচাপায় ১ জন নিহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার (২৮ মে) ভোর ৫টা পর্যন্ত বরিশালে মুষলধারে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছিল। এই মুহূর্তে আকাশে মেঘ ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত চলমান রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার রাত দশটা পর্যন্ত ১৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আজকের হিসাব এখনো রেকর্ড হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরাও এখন বিপর্যস্ত বলতে পারেন। তবে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত অনুমেয় বলে জানালেন আবহাওয়া কর্মকর্তা বশির আহম্মেদ। তিনি বলেন, বৃষ্টিপাত আরও হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে বরিশালের জেলা প্রশাসনের সুত্রে জানা গেছে, ঝড়ের তাণ্ডবে জেলায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫০ এর বেশি বাড়ি-ঘর এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আড়াই হাজার বাড়ি-ঘর। তবে বাড়ি-ঘরসহ কৃষি ও মৎস্য খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
যদিও আগাম প্রস্তুতি থাকায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ দুর্গত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল বলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার সম্ভবনা দেখছেন না বরিশালের প্রশাসন। জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় তিনজন নিহতের মধ্যে বরিশাল নগরের রুপাতলীতে দেয়াল ধসে দুজনের মৃত্যু হয় এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
বাকেরগঞ্জে গাছের ডাল ভেঙে জালাল সিকদার (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নিহত তিনজনের পরিবারের কাছেই তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহত জালাল সিকদার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের চর দাড়িয়াল এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া দেয়াল ধসে নিহত দুজন হলেন বরিশাল সদরের রূপাতলী এলাকার হোটেল মালিক লোকমান হোসেন ও কর্মচারী মোকছেদুর রহমান। তাদের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বড়বিঘাই গ্রামে।
এদিকে বিভাগীয় প্রশাসক জানিয়েছে এ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে সাতজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে রয়েছেন বরিশালে তিনজন, ভোলায় তিনজন ও পটুয়াখালীতে একজন।
অপরদিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে গোটা বরিশাল বিভাগে লন্ডভন্ড হয়েছে অসংখ্য গাছপালা। শহর ও গ্রাম মিলিয়ে পানিবন্দি আছেন অনেক মানুষ। ফসলি জমি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিলো বরিশাল। ফলে সোমবার সকাল ১০টা থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন ছিলো বরিশাল। রিমালের চোখ রাঙানিতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানা যাবে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে, যা অপসারণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। আর বরিশালের বিদ্যুৎ বিভাগের ওজিপাডিকো কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেলা ২টার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলমান রয়েছে। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই স্বাভাবিক হবে বলে জানান মঞ্জুরুল ইসলাম ও ফারুক আহম্মেদ।