• ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধা পাসপোর্ট অফিসটি কি এখন ঘুষ দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত?

Mofossal Barta
প্রকাশিত নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ
গাইবান্ধা পাসপোর্ট অফিসটি কি এখন ঘুষ দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত?

গাইবান্ধা পাসপোর্ট অফিসটি কি এখন ঘুষ দুর্নীতি ও দালাল মুক্ত?

সংবাদটি শেয়ার করুন....

আঃ রাজ্জাক সরকার গাইবান্ধা জেলা: গাইবান্ধা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান সহকারী পরিচালক কর্তৃক এক সময়ের ঘুষ দুর্নীতির অপবাদ ঘুচিয়ে অনেকটা দালাল মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রকাশ, গাইবান্ধা অঞ্চলের মানুষের এক সময় বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে পাসপোর্ট করতে হতো। ৯০ এর দশকে বা তার আগে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন দোকানে দোকানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখতো যে এখানে পাসপোর্টের কাজ করা হয়। ভারতে চিকিৎসা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাদের দরকার হতো, তারা ওইসব দোকানে গিয়ে তাদের সাথে চুক্তি করে পাসপোর্টের কাজ করতো।

অনেকেই রংপুরে যাতায়াত করে নিজে নিজেই পাসপোর্টের কাজ করতো। এতে সময় ও ব্যয় দুটোই বেশি পড়তো। আবার অনেকেই ঝামেলা মনে করে উল্লেখিত দোকান সমুহে যোগাযোগ করে পাসপোর্টের কাজ করে নিতো। রেমিট্যান্স সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবনতা মানুষের বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পাসপোর্ট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রতি জেলায় জেলায় পাসপোর্ট অফিস স্থাপন করা হয়। শুরুতেই এই পাসপোর্টের কাজ গাইবান্ধা ডিসি অফিসের বিল্ডিংয়ে করা হয়। বেশ কয়েক বছর এই বিল্ডিংয়ে চলতে থাকে।

পরে গাইবান্ধা শহরের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ধানঘড়া মৌজায় নুতন জেলখানার পশ্চিম পাশে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিজস্ব বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু গাইবান্ধা ডিসি অফিসের ভবনে পাসপোর্ট অফিস থাকা অবস্থায় ঘুষ দুর্নীতির কার্যক্রম ওপেন সিক্রেট ছিল। এখানে দালাল ছাড়া যেন কোন পাসপোর্ট করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপারে পরিণত হয়। মানুষের মুখে মুখে ঘুষ, দুর্নীতির নাতি দীর্ঘ খতিয়ান চাউর হয়। এমতাবস্থা চলতে থাকাকালীন সময়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস গাইবান্ধায় গত বছর নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়। এখানেও একই কায়দায় দালাল চক্র সক্রিয় থাকে। কিন্তু কয়েক মাস পূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন হানা দিয়ে তিন জন দালালকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তিতে সহকারী পরিচালক সহ বেশ কয়েকজন স্টাফের শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।

এদিকে, গাইবান্ধা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গত ১৩ অক্টোবর’২০২৪ ইং তারিখে নুতন সহকারী পরিচালক জনাব মোঃ শফিউল্লাহ সহ কয়েকজন স্টাফ যোগদান করেন। জনাব মোঃ শফিউল্লাহ যোগদানের পর থেকেই দালাল চক্র নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ২৪ নভেম্বর’২০২৪ ইং রবিবার সহকারী পরিচালক মোঃ শফিউল্লাহ এর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি দালাল মুক্ত রাখতে। তিনি আরো বলেন, এখানে মানুষ এসে যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য আবেদন গ্রহণ করে ওই দিনই ফিংগার করা হয়। তবে আবেদন কারী বেশি হলে সিরিয়াল অনুসারে সর্বোচ্চ পরের দিন ফিংগারের কাজ চলে যেতে পারে। অফিস পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, এই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ সংখ্যা ৯জন হলেও বর্তমানে রয়েছে ৬ জন। এখনো হিসাব রক্ষক, উচ্চমান সহকারী ও রেকর্ড কিপারসহ তিনটি পদ শূন্য রয়েছে।

লোক সংখ্যা কম থাকা অবস্থাতেও আমি অফিসটি ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছি। অফিসের কোন টেবিলে যাতে অতিরিক্ত কোন টাকা বা সময় অপেক্ষা করতে না হয় সেজন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। অনেকেই জানে না কিভাবে পাসপোর্ট করতে হয়! তাই অনেকেই কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে জেনে নেয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দালালের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। আমি এ জন্য অফিসের দর্শনীয় স্থানে পাসপোর্ট করার নিয়ম কানুন সম্বলিত পোস্টার লাগিয়েছি। এ ছাড়াও কারো কোন প্রয়োজনে আমার কাছে সরাসরি এসে জেনে নিচ্ছে, অনেকেই এখানে না এসেও ফোন দিয়ে জেনে নিতে পারছে। সে জন্য আমার মোবাইল ফোন নাম্বার দর্শনীয় স্থানে রেখেছি। তবে বিশেষ এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, পাসপোর্টধারীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে একটু সময় লাগছে। এ জন্য যারা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন, তাদের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ছোট বড় অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাই তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতেও যাতে দেরি না হয়, সেজন্য কাজ করছেন।
সুতরাং দেশের বাইরে চিকিৎসা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে যাদের যাওয়া দরকার, তারা যাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে না হয় বা কোন সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে পাসপোর্ট হাতে পায়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।