এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছিলেন, “নির্বাচিত, অনির্বাচিত, সেনাশাসন, সব ফরম্যাটে কিন্তু কেউ এই সংস্কারের কাজটুকু করতে পারে নাই। এই সুযোগটা আমরা মিস করতে চাই না।”
সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ২৫শে জানুয়ারিতে নিজ এলাকায় বক্তব্য রাখার সময় বলেন, হাসিনার যে প্রতিষ্ঠানে হাসিনার যে দালালরা আছে, ফ্যাসিবাদের যে দালালরা আছে, তাদেরকে উৎখাত করেই এবং খুনিদের বিচার করেই আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে এগোতে হবে।
যদিও আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেছেন, “বিচারকাজের সাথে নির্বাচনের কোনো বিরোধ নাই, কোনো সম্পর্ক নাই। বিচার বিচারের গতিতে চলবে।”
আবার নির্বাচন যখন হবে তাতে আওয়ামী লীগ আদৌ অংশ নিতে পারবে কিনা আছে সে বিতর্কও।
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী অনেকের বিরুদ্ধেই বহু অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আদালতে। সেসব অনেক ক্ষেত্রেই যেভাবে ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হয়েছে সেগুলো প্রমাণ করতে পারার মতো জটিলতার জায়গাও রয়েছে।
সরকারের জন্য সঠিক বিচার নিশ্চিত করা ছাড়াও বড় একটা প্রশ্নের জায়গা রয়েছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালেন। সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, দীপু মনি বা সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমন অনেকেই গ্রেপ্তার হলেও একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতাই পালিয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনাসহ সেসব নেতাদের আদৌ দেশে ফেরানো সম্ভব হবে কিনা আছে সেই প্রশ্নও। এসব প্রশ্নের উত্তর আদৌ সদুত্তর মিলবে কিনা সেদিকটাও অনিশ্চিত।
৫. দ্রব্যমূল্য, বিনিয়োগ
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, রিজার্ভ পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, এমন অনেক কিছুই সামাল দেয়া। অর্থনীতি বা ব্যাংকিং ব্যবস্থা সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হলেও মানুষের ওপর চাপ কমছে না।
সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন “এখনও পর্যন্ত জনগণের জীবনে কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যের অঙ্গনে স্বস্তি আনার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।”
চাঁদাবাজি, মজুতদারি, অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের মতো অনিয়ম মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি বলে সরকার জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারছে না বলে উল্লেখ করা হয়।
রাজনৈতিক সরকারের তেমন লোকজন থাকে যারা এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যেটা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।
সিন্ডিকেট ভাঙার প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদেরকে এখন সরকারি কয়েকটি সংস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যারা পর্যাপ্ত নয়।”
তবে জুন মাসের মূল্যস্ফীতি আটের নিচে নিতে পারার আশা প্রকাশ করেন তিনি যেটা গত কয়েক মাস ধরে দশের ওপরে রয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের সাথে কর্মসংস্থানের টানাপোড়েন মানুষের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের মাঝে অনিশ্চয়তার জায়গা থাকে যার মধ্যে বিনিয়োগ হয় না এবং এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন।
এছাড়াও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ বলে মনে করছেন ড. সাব্বির আহমেদ।
“ড. ইউনূস তো নিজেও একজন অর্থনীতিবিদ, উনি এই জিনিসটাই যদি ব্যর্থ হন তাহলে তো উনি সব জায়গাতেই ব্যর্থ,” বলছিলেন মি. আহমেদ।
ফলে বহুবিধ দ্বন্দ্ব, সংকট আর দুর্বলতা কাটিয়ে জনগণের জন্য আর্থিক দিক দিয়ে স্বস্তি আনাও সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।