• ৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুখ বদলালেও চাঁদাবাজি থামেনি পরিবহনে, ঢাকাতেই দিনে আদায় দুই কোটির বেশি

Mofossal Barta
প্রকাশিত মার্চ ২৫, ২০২৫, ২১:০৬ অপরাহ্ণ
মুখ বদলালেও চাঁদাবাজি থামেনি পরিবহনে, ঢাকাতেই দিনে আদায় দুই কোটির বেশি

মালিক সংগঠনের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।

সংবাদটি শেয়ার করুন....

তারেকুজ্জামান শিমুল: সোমবার সকাল দশটা। ঈদের আগে ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে একের পর এক যাত্রীবাহী বাস। তবে টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার আগে দূর পাল্লার বাসগুলোর প্রতিটিকে চাঁদা হিসেবে গুনতে হচ্ছে ৫২০ টাকা।

“এডিরে কয় জিপি (গেট পাস বা ছাড়পত্র)। জিপি না দিলে গাড়িই বাইরাতে পারবো না। যাত্রী থাউক, না থাউক, জিপি আমাগো দেওনই লাগে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ময়মনসিংহগামী বাসের একজন চালক।

ঘটনাটি যখন ঘটছিলো, তখন সেখানেই উপস্থিত ছিলো বিবিসি বাংলা। যিনি চাঁদার টাকা তুলছিলেন, কথা হয় তার সঙ্গেও।

কেন এবং কার নির্দেশে চাঁদা তুলছেন? প্রশ্ন ছিল চাঁদা আদায়কারী ব্যক্তির কাছে।

“এইডাই এখানকার সিস্টেম। গাড়ি ছাড়ার আগে এই টাকা দিতে হয়। মালিক সমিতির নির্দেশেই এইডা তোলা হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলেন চাঁদা আদায়কারী ব্যক্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঁচই অগাস্টের পটপরিবর্তনের পর লোক বদলালেও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি বাংলাদেশের পরিবহনখাতে।

মালিক ও শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে সারা দেশে এখনও প্রতিদিন আদায় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

এর মধ্যে কেবল ঢাকা শহরেই বিভিন্ন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে দৈনিক গড়ে দুই কোটি টাকার ওপরে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছে বিবিসি।

“যার প্রভাব পড়ছে পরিবহনের ভাড়া ও সেবার মানের ওপর,” বিবিসি বাংলাকে বলেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ দেড় দশকের একটানা শাসনামলে দলটির নেতারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে পরিবহনখাতের চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সেই স্থান দখল করেছে বিএনপিপন্থী মালিক ও শ্রমিকরা। ফলে বর্তমান চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের সঙ্গে এখন তারাই জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

যদিও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো দাবি করেছেন যে, চাঁদা নয়; বরং সংগঠন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের অর্থই নিচ্ছেন তারা।

এদিকে, সংগঠনগুলোর বাইরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও অনেকের নামে পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

সরকার বলছে, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।

“আমরা ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বসেছি…পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। বিআরটিএও কঠোর হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান।

মালিক সংগঠনের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।