ইয়াছিন আরাফাত, চান্দিনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: আজ ১২ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে। ময়নামতি সেনানিবাসে মিত্র বাহিনীর আক্রমণের কারণে ১১ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ময়নামতি সেনানিবাস থেকে বরুড়া দিয়ে চান্দিনা হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্থানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। ওই খবর চান্দিনার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এলে সংঘবদ্ধ হন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় চান্দিনার বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করতে অগ্রসর হয়।
দুপুরে উপজেলা সদরের হারং উদালিয়ার পাড় এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। ১১ ডিসেম্বর দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গোলাগুলির এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবারুদ শেষ হয়ে গেলে ১২ ডিসেম্বর ভোরে আত্মসমর্পণ করে প্রায় ১৭ শতাধিক হানাদার বাহিনী। উল্লাসিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের আটক করে বর্তমান চান্দিনা পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো করেন।
অপরদিকে ১১ ডিসেম্বর হারং উদালিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ধাওয়ায় ছয়জন পাকিস্তানি সেনা পালিয়ে যাওয়ার সময় করতলা গ্রামের একটি কেওড়াতলায় আটকে যায়। তখন মুক্তিকামী জনতা তাদেরকে দেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দিলে মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক মুক্তিকামী জনতা তাদেরকে আটক করার চেষ্টা করে। এ সময় পাকিস্তানি সেনারা চারদিকে এলোপাতারি গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ তিনজন মুক্তিকামী জনতা নিহত হন। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে পিছু হটে মুক্তিকামী জনতা। পরে রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আরও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে শত্রুদের ওপরে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে নিহত হন ওই ছয়জন।
এভাবে রক্তঝরা এক রাত শেষে এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা চান্দিনাতে উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা। আজকের দিনটি একদিকে যেমন আনন্দের অপরদিকে স্বজনহারাদের জন্য বেদনার দিন। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সময় চান্দিনা ও তার আশপাশের বিভিন্ন স্থানে খণ্ডযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১০ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। বহু পাকিস্তানি সেনাও নিহত হন।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে চান্দিনাবাসী আজও গর্বিত। জাতীয়ভাবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হলেও আজকের দিনটি চান্দিনাবাসীর জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দিবসটি উপলক্ষে চান্দিনাতে মুক্ত দিবস উদ্যাপন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চান্দিনা উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আনন্দ র্যালি, আলোচনা সভা, মসজিদে মিলাদ মাহফিল, মন্দিরে প্রার্থনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।