মোহাম্মদ সেলিম নাটোর থেকেঃ
দখল-দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়ে নারদ নদটি যেন সরু খালে পরিণত হয়েছে! ইতিহাস থেকে জানা যায়, নারদ বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদের একটি। এ নদকে ঘিরে প্রায় ৩০০ বছর আগে নাটোর শহরের গোড়াপত্তন হয়। নাটোরের রাজা রামজীবন ও রঘুনাথ আঠারো শতকের প্রথম দিকে এখানে তাদের রাজধানী স্থাপন করেন। সেসময়ে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে নাটোরের যোগাযোগ। তখন ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল খরস্রোতা এই নারদ নদ। এরপর ধীরে ধীরে নারদ নদের চারপাশের উর্বর ভূমিকে কেন্দ্র করে বসতি গড়ে ওঠতে থাকে। পদ্মার চারঘাট হয়ে বড়াল ও মুসাখান নদের পানি প্রবাহ মূলত নারদ নদের পানির অন্যতম উৎস। বড়াল নদের জন্ম রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা নদী থেকে। আর বড়াল থেকে জন্ম হয় মুসাখান নদের। আবার মুসাখান নদ থেকে নাটোরের সদর উপজেলায় পাইকপাড়া নামক স্থানে নারদ পদ্মার সঙ্গে যুক্ত হয়।
উনিশ শতকের শেষের দিকে চারঘাটে সুইসগেট নির্মাণের ফলে নারদ নদের ওপর অভিশাপ নেমে আসে! এর ফলে নারদ নদের পানির প্রবাহ কমতে থাকে। পাশাপাশি মুসাখান নদের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নারদ নদে তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। শুষ্ক মৌসুমে নারদ নদে পানি কমে যাওয়ার সুযোগে প্রভাবশালী অনেকে নদীতীরের জায়গা দখল করতে শুরু করে। এ ছাড়া নারদ নদের দুই তীর ঘেঁষে বিভিন্ন সময় স্থায়ী-অস্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে নদটি ধীরে ধীরে ছোট হয়ে গেছে। নদের ওপর বিভিন্ন সময় বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন সময় আশপাশের শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্য ফেলা হয়েছে এই নদে। বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে এখন নদের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। দূষিত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে নদ পাড়ের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিন ধরে নদের এ অবস্থা চলতে চলতে নদটি মশা-মাছি ও কীটপতঙ্গ উৎপাদনের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।”নদটির খননকাজে বিভিন্ন সময় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেসব অর্থের যথার্থ ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে! নদটি পরিকল্পিতভাবে খনন ও সংস্কার করা হয়নি! দেখা গেছে, খননের কয়েক মাস পরে খননকৃত মাটি আবার নদটিতে গিয়ে নদটি ভরাট হয়ে গেছে। বলতে গেলে নারদ নদের দুই তীরের কোনো জায়গা ফাঁকা নেই, প্রায় সবটাই চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। নাটোর শহরের পানি নিষ্কাশনসহ স্থানীয় জীবনযাত্রায় নারদ নদের গুরুত্ব অনেক।