আল মামুন ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের শিবালয়ের যমুনায় কাটার মেশিন বসিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় অবৈধভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনকারী একটি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।নিয়ম নীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে যৌথবাহীনি এবং স্থানীয় প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে প্রকাশ্যে নদীর বিভিন্ন স্থানে ৮টি কাটার মেশিন দিয়ে দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা অবৈধভাবে বালু কেটে বিক্রি করছে বালু খেকোরা। দেখে মনে হচ্ছে এটা যেন সরকারি কোন বালু মহাল। এক মাসের বেশী সময় ধরে নির্বিচারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও থামছে না বালু উত্তোলন। ফলে চরের নদী তীরবর্তী বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন টাওয়ার, আলোকদিয়া চরের মুজিব কেল্লা, কয়েকটি স্কুল, মসজিদ,মাদ্রাসা ও হাট-বাজারের বিভিন্ন স্থাপনা। অভিযোগ রয়েছে বেশিরভাগ এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে এসব বালু উত্তোলন হচ্ছে। এদের ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছ না।
বালু তোলা বন্ধে নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আরিচা ঘাটে বিক্ষোভও করেছে স্থানীয়রা। কিন্তুু কোন কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন।
সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আলোকদিয়া এলাকার যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবির) বিদ্যুতের টাউয়ারের পাশে আটটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে ভরা হচ্ছে। এসব বালু বাল্কহেডে করে অন্য জেলায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে নদীতে চলে গেছে একটি মসজিদ, বহু কৃষিজমি ও কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মসজিদ, সাত কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে নির্মিত মুজিব কেল্লা। ভাঙনের শিকার ছলিম উদ্দিন বলেন, “এখন শীতকাল চলছে। সাধারনত নদী ভাঙন কম থাকে। কিন্তু নদীতে ড্রেজারে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙছে। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে ভাঙন তীব্র হয়েছে। ফলে কয়েকটি পরিবার মিলে আমরা অন্যত্র সরে যাচ্ছি।
ভুক্তভোগী মো. মুক্তার হোসেন, মো. সিরাজুল ইসলাম, রাজু আহমেদসহ স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে ৮টি কাটার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকার কেউ বাধা দিতে গেলে মারধরসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেয় তারা। ভয়ে এখন কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয়রা আরো জনান, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলাধীন তেওতা ইউনিয়নের অন্তর্গত আলোকদিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। এতে আলোকদিয়া গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া নদীর ওপর দিয়ে যাওয়া জাতীয় গ্রিডের ৩৩ কিলো ভোল্টের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় টাওয়ারের তলদেশ থেকে মাটি সরে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ওই বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ফলে এলাকাবাসী আতঙ্কে দিন পার করছেন।
আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, “অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতের পিলারের পাশ থেকে বালু তোলা বন্ধে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর প্রশাসন বরাবর একাধিক বার অভিযোগ করেছে। অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।”
এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন বলেন, গত ১৭ ডিসেম্বরও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোনভাবে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। নিয়মিত অভিযান চালানো হবে আশ্বাস দেন তিনি।” বালু তোলার মূলহোতাদের ধরার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।